পাকিস্তানের করাচিতে আবাসিক ভবনধসে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৬ জনে। প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতার মধ্যেও শনিবার উদ্ধারকারী দলগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লিয়ারি এলাকার এই ভবনটি কয়েক বছর আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ছিল এবং তিন বছর ধরে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে বাড়ির মালিক ও কিছু বাসিন্দা কোনো নোটিশ পাননি বলে জানান।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ভবনটি ধসে পড়ে। এর ঠিক আগে বাসিন্দারা দেয়ালে ফাটলের শব্দ শুনেছিলেন বলে জানান। লিয়ারি এক সময় গ্যাং সহিংসতায় জর্জরিত ছিল এবং পাকিস্তানের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকাগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত ছিল।
প্রাদেশিক স্বাস্থ্য বিভাগের পুলিস সার্জন সাম্মাইয়া সাইয়্যেদ জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা শনিবার পর্যন্ত ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আহত হয়েছে ১৩ জন।
৫৪ বছর বয়সী দেবরাজ বলেন, ‘আমার মেয়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে। সে আমার আদরের মেয়ে ছিল। খুবই আবেগপ্রবণ ছিল। মাত্র ছয় মাস আগে তার বিয়ে হয়েছিল।’
উদ্ধারকর্মীরা সারা রাত কাজ চালিয়েছেন। শনিবার সকালে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছয়। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলছে, এখনো অন্তত আটজন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জাভেদ নবি খোসো জানান, ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ভবনের বাসিন্দাদের সরে যেতে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা জোর করে আদেশ বাস্তবায়ন করতে চাই না। আমরা পর্যায়ক্রমে নোটিশ পাঠিয়ে দিই। কিন্তু তারা তা গুরুত্ব দেয়নি।’
তবে ভবনটির মালিক ও বাসিন্দা ইমরান খাসখেলি বলেন, ‘আমরা কি পাগল যে পরিবার নিয়ে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকব? কোনো নোটিশ পাইনি।’
তিনি আরো জানান, শুক্রবার সকালে ভবনের পিলারে ফাটল দেখতে পেয়ে তিনি সবাইকে সতর্ক করেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি সব দরজায় কড়া নেড়ে সবাইকে বলেছিলাম বেরিয়ে যেতে। প্রায় ৪০টি পরিবার এখানে থাকত, কিন্তু অনেকেই আমার কথা শোনেনি।’
খোসো আরো জানান, ওই জেলায় ৫০টির বেশি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি গতকাল থেকে খালি করা হয়েছে।
‘আমরা অসহায়’
সরকারি উদ্ধার সংস্থা ১১২২-এর প্রধান আবিদ জালালউদ্দিন শেখ বলেন, উদ্ধারকাজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতদের বেশির ভাগই নারী, যারা দিনের বেলায় সাধারণত বাসায় থাকেন।
৭০ বছর বয়সী ঝুমো মাহেশ্বরির পরিবারের ছয়জন সদস্য ভবনের প্রথম তলায় ছিল, যখন তিনি সকালে কাজে বেরিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমার আর কিছুই রইল না—আমার পরিবার সবাই ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে, আর আমি শুধু প্রার্থনা করতে পারি তাদের নিরাপদ উদ্ধারের জন্য।’
আরেক বাসিন্দা মায়া শাম জি জানান, তার ভাইয়ের পরিবারও ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এটি একটি বিপর্যয়। আমাদের জীবনে সব কিছু বদলে গেছে। আমরা অসহায়ভাবে শুধু উদ্ধারকর্মীদের দিকে তাকিয়ে আছি, যেন তারা আমাদের প্রিয়জনদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে পারেন।’
৩০ বছর বয়সী বাসিন্দা শঙ্কর কাম্ভো জানান, তিনি বাইরে ছিলেন। তার স্ত্রী ফোন করে ভবনে ফাটল ধরার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে বলি, তুমি এখনই বেরিয়ে আসো। সে প্রতিবেশীদের সতর্ক করতে গিয়েছিল। কিন্তু এক নারী তাকে বলেছিল, এই ভবন আরো ১০ বছর টিকে থাকবে।’ তবু আমার স্ত্রী আমাদের মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। প্রায় ২০ মিনিট পরই ভবনটা ধসে পড়ে।’
বিআরএসটি / জেডএইচআর