শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
BRS TIMES
আন্তর্জাতিকপ্রচ্ছদ

ফোনালাপ বিতর্কে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সে দেশের সাংবিধানিক আদালত। সাবেক কম্বোডিয়ান নেতা হুন সেনের সঙ্গে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে পদত্যাগের চাপ বাড়ছিল।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ফাঁস হওয়া অডিওতে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ বলে সম্বোধন করেন এবং একজন শীর্ষস্থানীয় থাই সামরিক কর্মকর্তার সমালোচনা করেন। এই ফোনালাপ জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং তার অপসারণের দাবিতে একটি আইনি আবেদন দায়ের করা হয়। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই আদালত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যদি তাকে শেষ পর্যন্ত অপসারণ করা হয়, তাহলে তিনি হবেন সিনাওয়াত্রা পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি যিনি পূর্ণ মেয়াদ শেষ না করেই ক্ষমতা হারালেন। গত দুই দশক ধরে থাই রাজনীতিতে সিনাওয়াত্রা পরিবার আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তার নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ইতিমধ্যেই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণশীল জোটসঙ্গী সরকার ছেড়ে চলে গেছে।

সাংবিধানিক আদালত ৭-২ ভোটে তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পেতংতার্নের পক্ষে এখন ১৫ দিনের সময় আছে তার প্রতিরক্ষার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য। এই সময়ে দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুনগ্রুনগ্রুয়াংকিত।

যদি তাকে শেষ পর্যন্ত বরখাস্ত করা হয়, তবে গত বছরের আগস্টের পর এটি হবে ফেউ থাই পার্টির দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী অপসারণের ঘটনা। গত বছর একই কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্রেত্থা থাভিসিনকেও বরখাস্ত করা হয়েছিল, কারণ তিনি তার মন্ত্রিসভায় এক সাবেক আইনজীবীকে নিয়োগ দেন যিনি একসময় জেল খেটেছিলেন।

স্রেত্থার বরখাস্তের কয়েক দিনের মধ্যেই পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কমবয়সী (৩৮ বছর) প্রধানমন্ত্রী এবং তার ফুফু ইয়াংলাক সিনাওয়াত্রার পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।

দুর্বল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জের মধ্যেই চলতি সপ্তাহে তার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯.২ শতাংশে, যেখানে মার্চ মাসে তা ছিল ৩০.৯ শতাংশ।

ফাঁস হওয়া ফোনালাপের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে সাম্প্রতিক সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ‘আলোচনার কৌশল’ বলে দাবি করেছেন। তবে রক্ষণশীল আইনপ্রণেতারা তাকে কম্বোডিয়ার কাছে নতি স্বীকার করার অভিযোগ তুলেছেন এবং বলছেন এতে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

এই আদালতের রায় এসেছে এমন এক দিনে যখন তার বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা নিজেও গুরুতর রাজনৈতিক মামলার মুখোমুখি। তিনি ৯ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার এক সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারকে অপমান করার অভিযোগে লেসে মাজেস্তে আইনে বিচারের সম্মুখীন।

২০২৩ সালে ১৫ বছরের নির্বাসন শেষে থাকসিন থাইল্যান্ডে ফেরেন। দেশের এই অন্যতম বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতা বর্তমানে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি যিনি রাজদ্রোহ আইনের আওতায় বিচার পাচ্ছেন।

থাকসিনের এই প্রত্যাবর্তন ছিল একটি বড় রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ, যা তার দল ফেউ থাই এবং তাদের সাবেক শত্রু রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মধ্যে সম্পন্ন হয়। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আছে সেনাবাহিনী — যারা দুইবার সিনাওয়াত্রা পরিবারের সরকার উৎখাত করেছিল — এবং রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ মহল।
বিআরএসটি/এসএস

Related posts

দুর্নীতি নির্মূল সম্ভব নয়, তবে কমানো যাবে : দুদক চেয়ারম্যান

News Desk

কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

brs@admin

নুরাল পাগলা’র দরবারে হামলার ঘটনায় মামলা, আসামী ৩৫০০

News Desk

পাঁচ ব্যাংকে জমা টাকাই এখন দুঃস্বপ্ন, গ্রাহকরা ফিরছেন খালি হাতে

News Desk

আহমেদীয়া ফাইন্যান্সের ৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

News Desk

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি সভা আহ্বান করেছে ইরান

brs@admin
Translate »