রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
BRS TIMES
আন্তর্জাতিকপ্রচ্ছদ

রাশিয়া-ভারত-চীন ত্রয়ী আবার সক্রিয় হচ্ছে?

বিশ্ব রাজনীতির সাম্প্রতিক টানাপোড়েনের মধ্যে আবারও আলোচনায় এসেছে রাশিয়া-ভারত-চীন (আরআইসি) ত্রয়ী। ইউক্রেন যুদ্ধ, ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনা এবং পশ্চিমাদের প্রভাবের মধ্যে এই তিন দেশের পুরনো জোট আবার সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে মস্কো। এর ফলে শুধু এশিয়ার ভূরাজনীতিই নয়, বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্যও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি ইউরেশিয়ার একটি অনুষ্ঠানে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, রাশিয়া, ভারত ও চীনের সমন্বয়ে গঠিত আরআইসি ফরম্যাটের কার্যক্রম আবার চালু করার সময় এসেছে। তিনি জানান, এই ত্রয়ী মঞ্চকে পুনরুজ্জীবিত করতে রাশিয়া আন্তরিকভাবে আগ্রহী। মূলত সাবেক রুশ প্রধানমন্ত্রী ইয়েভগেনি প্রিমাকভের উদ্যোগে বহু বছর আগে এই প্ল্যাটফর্ম চালু হয়েছিল, যার অধীনে পরবর্তী সময়ে ২০ বারেরও বেশি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রী নয়, বরং তিন দেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং আর্থিক খাতের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। এখন, সীমান্তে ভারত ও চীনের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে বলেই ল্যাভরভ মনে করছেন এটি পুনরায় সক্রিয় করার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

ল্যাভরভের মতে, এই ত্রয়ী গঠনমূলক আলোচনার মধ্য দিয়ে কেবল ত্রিপক্ষীয় সম্পর্কই উন্নত করবে না, বরং বিশ্বে উদীয়মান নতুন শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, “আমরা এই ফরম্যাটের কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব পুনরায় শুরু করতে আগ্রহী।” তার মতে, এই মুহূর্তে রাশিয়া, ভারত ও চীন তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং পারস্পরিক সমন্বয় এই নেতৃত্বকে আরও সুদৃঢ় করতে পারে।

এর আগে গত ১৬ মে দেওয়া এক বক্তব্যে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সতর্ক করেছিলেন, পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ কৌশলে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “চীনের প্রভাব এশিয়ায় দিন দিন বাড়ছে, আর ভারতও অর্থনৈতিকভাবে দৃঢ় হচ্ছে। এই দুই দেশকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলে সবচেয়ে বেশি লাভ হবে আমেরিকা ও ইউরোপের। তারা চায়, দুই প্রতিবেশী পরস্পরের আধিপত্য ঠেকাতে লড়াইয়ে জড়াক, আর এই সুযোগে এশিয়ার বাকি দেশগুলোকে নিজেদের বলয়ে টেনে নেয় পশ্চিমারা।”

এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরআইসি ফরম্যাট পুনরায় সক্রিয় করার প্রস্তাব আসা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এটি স্পষ্ট করছে যে মস্কো এখন নতুন একটি কৌশলগত মঞ্চ গঠনের দিকে মনোযোগী, যেখানে এশিয়ার প্রধান শক্তিগুলোকে একত্র করে পশ্চিমাদের প্রভাবকে ভারসাম্যহীন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে শুধু ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা নয়, বরং একটি নতুন ভূরাজনৈতিক ছক তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।

রাশিয়া-ভারত-চীন ত্রয়ীর সম্ভাব্য পুনরুজ্জীবন বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। একদিকে এশিয়ায় নেতৃত্বের প্রশ্নে একতা, অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বকে চাপে রাখার কৌশল—এই দুটি লক্ষ্যই আরআইসি ফরম্যাটকে আবারও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে। এখন দেখার বিষয়, ভারত ও চীন এই প্রস্তাবে কীভাবে সাড়া দেয় এবং বাস্তবে এই ত্রয়ী একমঞ্চে ফিরতে পারে কিনা। তথ্যসূত্র : এনডিটিভি

বিআরএসটি / জেডএইচআর

Related posts

বিকেলে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা করবে এনসিপি

News Desk

পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ সেনা নিহত

brs@admin

আমরা হাসিনার কাছে মাথানত করিনি: এ্যানি

News Desk

গাজার ফিলিস্তিনিদের ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র

News Desk

সচিবালয়ের নিরাপত্তা জোরদারে নির্দেশনা

News Desk

বাংলাদেশ রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে : চীনের রাষ্ট্রদূত

brs@admin
Translate »