ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোল হামাসের নেতাদের মিশরে হত্যার পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। মিশরীয় কর্মকর্তারা সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এই গোয়েন্দা তথ্য জানতে পেরেছেন। সেইসঙ্গে তারা ইসরাইলকে সতর্ক করে দিয়েছেন, এমন কোনো হামলা হলে মিশর কঠোর জবাব দেবে।
জ্যেষ্ঠ মিশরীয় কর্মকর্তাদের বরাতে এ খবর দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
এক উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানায়, ‘গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ইসরাইল কিছুদিন ধরেই কায়রোতে হামাস নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করছে। গত দুই বছরে শহরে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার সময় ইসরাইলের এমন একটি হত্যাচেষ্টা ভণ্ডুল করে দিয়েছিল মিশর।’
গত ৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের সময় কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের একটি ভবনকে লক্ষ্যবস্তু করে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এ হামলায় ছয়জন নিহত হন।
ইসরাইলি হামলায় নিহত ওই ছয়জনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- হামাসের সিনিয়র খলিল আল-হাইয়ার ছেলে হুমাম, তিনজন দেহরক্ষী এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
জ্যেষ্ঠ মিশরীয় কর্মকর্তাদের এমন মন্তব্য ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হামাসকে অন্য দেশে টার্গেটের হুমকির প্রেক্ষিতে এলো। নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘অন্য দেশেও হামাসকে টার্গেট করবে ইসরাইল’।
নিরাপত্তা সূত্রটি বলেন, ‘মিশরের মাটিতে হামাস নেতাদের জীবনের ওপর যেকোনো হামলা মিশরের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। সেটি হবে কার্যত ইসরাইলের যুদ্ধ ঘোষণা, যার জবাব দিতে আমরা এক মুহূর্ত দেরি করব না।’
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে হামাস নেতারা মিশরে বসবাস করছেন-এমন কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কিন্তু সূত্রটি মিডল ইস্ট আইকে জানায়, বর্তমান গাজা যুদ্ধ শুরুর আগেও কয়েকজন নেতা বছরের পর বছর ধরে মিশরে বসবাস করছেন। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের পরিচয়, সংখ্যা ও সঠিক অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্রের বরাতে জানা যায়, মিশরীয় কর্মকর্তারা তাদের ইসরাইলি সমকক্ষদের আলোচনায় ফেরার এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির দিকে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে অঞ্চলটিকে অবিরাম যুদ্ধ ও উত্তেজনার দিকে ঠেলে না দেওয়া হয়।
সূত্রটি আরও জানায়, ‘গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে তেলআবিবের দ্বিধান্বিত অবস্থানের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মিশর-ইসরাইল সম্পর্ক ইতোমধ্যেই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
গাজার ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের উত্তর সিনাইয়ে স্থানান্তরের সম্ভাবনার দায় মিশরের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নিয়েও কায়রো সতর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট মিডল ইস্ট আই জানিয়েছিল, মিশর প্রায় ৪০ হাজার সেনা গাজা সীমান্তে মোতায়েন করেছে, যাতে ফিলিস্তিনিরা সিনাইয়ে প্রবেশ করতে না পারে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা ভেঙে পড়ায় কায়রো কার্যত প্রান্তিক হয়ে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, গাজায় বড় ধরনের ইসরাইলি আক্রমণ হলে ফিলিস্তিনিরা সিনাই সীমান্ত ভেঙে ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে।
এর আগে গত সপ্তাহে এক জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং মিশর ও ইসরাইলের মধ্যে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
বিআরএসটি / জেডএইচআর