দেশবরেণ্য লালনগীতিশিল্পী ফরিদা পারভীন গত ৫ জুলাই থেকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সেখানে কিডনি রোগ ও শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে চিকিৎসাধীন তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত এ শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত বুধবার ৯ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়।
শিল্পী ফরিদা পারভীনের শারীরিক অবস্থার ‘উন্নতি হওয়ায়’, তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঢাকার ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রোববার রাতে এই শিল্পীকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘ফরিদা পারভীন এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন।’
স্বাস্থ্য সচিবের নির্দেশনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড ফরিদা শারীরিক অবস্থা দেখে চিকিৎসা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। এই বোর্ডে কিডনি, বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা আছেন। স্বাস্থ্যসচিবের প্রতিনিধিও আছেন।
ফরিদা পারভীনের ছেলে ইমাম জাফর নোমানী ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আম্মাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। ডাক্তার বলেছেন ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অবস্থা আবারো আগের মতই হয়ে যাবে। সবাইকে আবারো অনুরোধ করছি হাসপাতালে ভিড় না করতে।’
৭১ বছর বয়সী ফরিদা পারভীন কেবল কিডনি সমস্যা নয়, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। মাঝেমাধ্যেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয় তাকে।
ফরিদা পারভীনের অসুস্থতার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর পর কেউ কেউ সরকারকে এই শিল্পীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
পরে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ফরিদা পারভীনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ফরিদা পারভীনের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতে চাইলেও পরিবারের তরফে বলা হয়, তারা চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে সক্ষম।
নজরুলসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান শুরুর পর লালনসংগীত দিয়ে শ্রোতাদের কাছে পরিচিতি পান ফরিদা পারভীন। লালন সংগীতজ্ঞ ও সাধক প্রয়াত মকসেদ আলী শাহের কাছে তিনি লালনসংগীতের তালিম নেন।
সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার পান তিনি।
বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।
ফরিদা পারভীনের কণ্ঠে লালনের গানের যে চর্চা হয়ে এসেছে গেল পাঁচ দশক ধরে, সেটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে প্রায় ১৬ বছর আগে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘অচিন পাখি সংগীত একাডেমি’।
কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা, প্রতিষ্ঠানের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া, এবং নিজস্ব ভবন না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানটিও টিকে থাকার লড়াইয়ে জর্জরিত।
বিআরএসটি / জেডএইচআর