রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫
BRS TIMES
জাতীয়প্রচ্ছদ

জেরা কক্ষ ও নির্যাতনের যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে গুম তদন্ত কমিশন

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ের প্রমাণ ধ্বংসের চেষ্টার পরও তারা দেশের প্রায় প্রতিটি আটক কেন্দ্রে বিশেষ জেরা কক্ষ ও নির্যাতনের যন্ত্রপাতির অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে।

কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনের সপ্তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘আমরা যে সব আটক কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি, তার প্রায় প্রতিটিতেই নির্যাতনের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত জেরা কক্ষ ছিল।’

প্রতিবেদনটি বলছে, প্রমাণ ধ্বংসের নানা চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু আলামত উদ্ধার করা গেছে, যা নির্যাতনে ভুক্তভোগীদের বিবরণীর সঙ্গে মিলে গেছে। উদাহরণ স্বরূপ, র‌্যাব-২ ও সিপিসি-৩-এ ঘূর্ণায়মান চেয়ার, র‌্যাব-৪ ও ডিবিতে ব্যবহার করা ‘যম টুপি’ ও টাস্কফোর্স ইন্টাররোগেশন (টিএফআই) সেলে মানুষকে ঝুলিয়ে নির্যাতন করার যন্ত্রের (পুলি সিস্টেম) অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ধ্বংস করা প্রায় প্রতিটি স্থানে সাউন্ড প্রুফিংয়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। কক্ষগুলো এমনভাবে তৈরি ছিল, যেন নির্যাতনের শিকারদের চিৎকার বাইরের কেউ শুনতে না পায়। কিছু কেন্দ্রে নির্যাতনের শব্দ ঢাকতে উচ্চস্বরে গান বাজানো হতো, যা আবার নির্যাতকদের মনোরঞ্জনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।

ভুক্তভোগীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দীর্ঘসময় ধরে অসহনীয় কষ্টভোগ করেছেন। তাদের প্রায়ই নিয়মিত প্রহরীদের অর্ধেক খাবার দেওয়া হতো, হাতকড়া পরিয়ে ও চোখ বেঁধে রাখা হতো ও সম্পূর্ণ নির্জন কক্ষে আটকে রাখা হতো।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘নিজেদের ভাগ্য সম্পর্কে অনিশ্চয়তা আর এসব নিষ্ঠুর বাস্তবতার কারণে, তারা অবিরত মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছে।’

কমিশন আরও জানিয়েছে, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগ সময়েই গুম করে রাখা হতো, যাতে আইনি জবাবদিহির ভয় ছাড়াই তাদের ওপর নির্যাতন চালানো যায়।

ভুক্তভোগীরা কখনও আদালতে হাজির হবেন কি-না, নাকি রাষ্ট্রীয় রেকর্ড থেকে একেবারে মুছে যাবেন, এই অনিশ্চয়তা এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছিল, যা অপরাধীদের সাহস অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে নির্যাতন সহজেই চলতো এবং তা থামানো বা তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো কেউ থাকত না।

প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, যারা নির্যাতন চালাতো, তারা অনেক সময় বাড়তি নজরদারির আশঙ্কায় প্রমাণ গায়েব করত। আবার কিছু ক্ষেত্রে নির্যাতনের দাগ মুছে যেতে বা ক্ষত সেরে উঠতে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করত। এরপরই কাউকে জনসমক্ষে হাজির করত, যাতে তাদের অপরাধের কোনো স্পষ্ট চিহ্ন না থাকে।

প্রতিবেদন বলছে, নিয়মিত যন্ত্রণা ছাড়াও নির্যাতনের সবচেয়ে সাধারণ প্রচলিত ধরণ ছিল মারধর। এছাড়া, মূত্রত্যাগের সময় যৌনাঙ্গে বিদ্যুৎ শক দেওয়া, ঘূর্ণায়মান চেয়ার ব্যবহার করে কষ্ট দেয়া ও পুরো শরীর ঢেকে অত্যাচার করার মতো যন্ত্রপাতি দিয়ে নির্যাতন চালানো হতো।

কমিশন লক্ষ্য করেছে, নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিতভাবে এতে অংশ নিয়েছেন, যা প্রমাণ করে এটি ছিল একটি সুসংগঠিত ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কারণ, এ ব্যবস্থাকে সচল রাখতে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, জনবল প্রশিক্ষণ ও নির্যাতনের পদ্ধতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের ব্যাপকতা ও এর ধারাবাহিকতা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, এটি শুধু মাঠ পর্যায়ে অনুমোদিত ছিল না, বরং ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায় থেকেও এর পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনটি বলেছে, ক্ষমতার উচ্চ পর্যায়ের স্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের নির্যাতন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও দীর্ঘসময় ধরে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এর জন্য অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণে বাজেট বরাদ্দ লাগত।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘এই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় শুধু মাঠপর্যায়ের অপরাধীদের ওপরই পড়ে না, এর দায় বর্তায় সেই সব শীর্ষ কর্মকর্তা ও কমান্ডিং অফিসারদের ওপরও- যারা এ সব কর্মকাণ্ডে অনুমোদন দিয়েছেন বা উৎসাহিত করেছেন।’
বিআরএসটি/এসএস

Related posts

৪৭ থেকে ৫২, ৭১ থেকে ২৪ একই সূত্রে গাঁথা : সারজিস

brs@admin

সফলভাবে সম্পন্ন হলো জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি

News Desk

জয়া আহসানের ছবির ট্রেলার শেয়ার করলেন অমিতাভ বচ্চন

brs@admin

কাল বাজারে আসছে ১০০ টাকার নতুন নোট

News Desk

মেহজাবীনের আসল নাম জানেন কি?

News Desk

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের প্যানেল ঘোষণা

News Desk
Translate »